themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/projonmeralo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে জেনেও মানুষ কেন ধূমপান করে? মোটা হওয়া বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে জেনেও কেন কেউ কেউ অতিরিক্ত খাবার খায়? সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো জেনেও কেন আমরা দেরিতে বিছানা ছাড়ি? ব্যায়াম করতে অনিহাবোধ করি? অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার আমাদের শারীরিক মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করে জেনেও আমরা কেন ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাউজ করি? নিয়মিত লেখাপড়া করলে ভবিষ্যতে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও ভাবনাহীন জীবন পাওয়া যায় জেনেও কেন শিক্ষার্থীরা লেখা পড়ায় অমনোযোগী হয়? কেন আমরা এই খারাপ অভ্যাসগুলি ছাড়তে পারিনা? এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর:- মানব মস্তিষ্ক বিলম্বিত ফল লাভের চেয়ে তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি পাওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আমরা ভবিষ্যতের থেকে বর্তমানকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি বলা যায় এটা আমাদের একটা সহজাত প্রবণতা।
ধূমপান হয়তো দশ বছরে ধীরে ধীরে আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে কিন্তু তা আপনাকে তাৎক্ষণিক অবসাদ থেকে মুক্তি দান করে বলে আপনি সিগারেট খান। দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে মুখরোচক বলেই আমরা অতিভোজন করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে খারাপ ফল বয়ে আনলেও তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ দেয় বলে আমরা মোবাইল স্কিন থেকে চোখ ফেরাতে পারি না। ব্যায়াম করা বা পাঠাভ্যাসের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য,পরিশ্রমের চেয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঘোরাঘুরি করা তাৎক্ষণিক বেশি আনন্দদায়ক বলেই লেখাপড়াতে মন বসে না?
কিন্তু আমরা কেন বিলম্বিত সুখভোগের চেয়ে তাৎক্ষণিক আরামকে বেশি গুরত্ব দেই?? এই প্রশ্নের উত্তর কি? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের একটু কল্পনাশ্রয়ী হতে হবে। ধরুন আপনি কোন মানব সন্তান নয় আপনি খাদ্যশৃঙ্খলের নিচে থাকা অন্য কোন প্রাণি। ধরুন আপনি কোন হরিণ সাবক আফ্রিকার জঙ্গলে বাঘ,সিংহ,ভাল্লুক আর কুমিরের মত বিপদজনক প্রাণিদের সাথে বসবাস করছেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিটি মুহূর্ত খাদ্য,নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের সন্ধান করতে হচ্ছে। এক মুহূর্তের অসতর্কতা আপনার মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। আপনার তখন নিশ্চয় বিলম্বিত সুখভোগের কথা ভাববার অবকাশ থাকবেনা বরং তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো বেশি প্রাসংগিক মনে হবে? এবার চলুন আরো অনেকটা পেছনে গিয়ে দেখি খাদ্যশৃঙ্খলের মাঝামাঝি থাকা আমাদের পূর্বপূরুষ হোমো-স্যাপিয়েন্চরা যখন কয়েক লক্ষ বছর ধরে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেরিয়েছে খাদ্য,আশ্রয় আর নিরাপত্তার জন্য তখন তাদের কাছে ঐ হরিণ সাবকটির মত বিলম্বিত সুখভোগের চেয়ে তাৎক্ষণিক পুরস্কার বেশি প্রয়োজনীয় ছিল। হোমো স্যাপিয়েন্চ এবং আমাদের মস্তিস্কের গঠন প্রায় একই রকম। সভ্যতা বিকশিত হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার বছরে কিন্ত মানবমস্তিস্ক বিকাশিত হয়েছে কয়েক লক্ষ বছরে। সভ্যতার বিকাশ মস্তিস্ক গঠনের তুলনায় খুবই কম সময়।
আজ সভ্য মানুষের কাছে তাৎক্ষণিক আরামের চেয়ে দেরিতে পুরস্কার পাওয়া বেশি গুরত্বপূর্ণ কিন্ত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমাদের যে অভ্যাস গঠিত হয়েছে অনেকক্ষেত্রেই আমরা তা থেকে মুক্তি পাইনা আমরা তার ক্রীতদাসে পরিণত হই। সভ্য সমাজের জন্য সেই খারাপ অভ্যাসগুলো আমরা সহজে ত্যাগ করতে পারিনা।
কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই চাই সুস্থ সবল নিরোগ শরীর। আমরা চাই ভবিষ্যতে আর্থিক স্বচ্ছলতা। আমরা সুখ ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে চাই। মানুষ সর্বত্র শক্তি,প্রতিপত্তি আর মর্যাদাকে অনুসরণ করে আপনিও চান অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করুক।মোট কথা আমরা সবাই সফল হতে চাই। নিয়মিত বই পড়া,খাবার গ্রহণের পূর্বে হাত ধোয়া, নিয়মিত হোম ওয়ার্ক, অফিসের প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সেরে রাখা, ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করা, সুন্দর করে কথা বলা, ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা এরকম আরো অনেক অনেক ভালো অভ্যাস আপনি তৈরি করতে চান। আপনি ধূমপান ছেড়ে দিতে চান, অনলাইনে বেশি সময় থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা বা আড্ডা দেওয়া, অপরিচ্ছন্ন পোশাক পড়া, সবসময় রাগান্বিত থাকা,বিলাস দ্রব্যের পেছনে অর্থ খরচ করা এরকম আরো অনেক খারাপ অভ্যাস আপনি ত্যাগ করতে চান। সত্যি বলতে আপনি সচেতন ভাবে চাইলে এই ভালো অভ্যাসগুলি গঠন করতে পারেন এবং খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে অভ্যাস হলো এমন একটা আচরণ যাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠতে হলে বারবার তার পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
কীভাবে আমরা ভালো অভ্যাস গঠন করব এবং খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করব তার একটা সুস্পষ্ট গাইডলাইন হতে পারে এই বই “ছোট অভ্যাস বড় সাফল্য”।
অভ্যাসের মাত্র চারটি আইন অনুসরণ করে সহজেই ভালো অভ্যাস গঠন এবং খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা যায়।
১ম আইন: অভ্যাসকে কে সুস্পষ্ট করে তুলুন।
২য় আইন: এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
৩য় আইন: অভ্যাসকে আরো সহজ করে তুলুন।
৪র্থ আইন: অভ্যাস কে আরো সন্তোষজনক করে তুলুন।
এবার খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য উপরের পদ্ধতিগুলির বিপরীত নিয়ম অনুসরণ করুন।
ধরুন আপনি সকালে স্বাস্থ্যকর রান্না করতে চান তবে রাতে আপনার রান্নাঘর প্রস্তুত করে রাখুন। যদি অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার অভ্যাস তৈরি হয় তাহলে প্রতিবার সেটি দেখার পর রিমোট হাতের নাগালের বাইরে কোথাও রাখুন অথবা টিভিটাকেই লিভিং রুম থেকে সরিয়ে রাখুন। ফোন আসক্তি থেকে দূরে থাকতে মাঝে মাঝে ফোনটিকে অন্য রুমে রেখে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি সঞ্চয়ী হতে চান, আপনি নিজেকে বলুন এই মাসে আপনি যা সঞ্চয় করবেন সামনের মাসে তা আপনার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে । ভালো অভ্যাসের সাথে যুক্ত বাধা গুলোকে কমিয়ে ফেলুন। যখন বাধা কমে যাবে অভ্যাস সহজ হয়ে উঠবে। খারাপ অভ্যাসের সাথে যুক্ত বাধাগুলো বাড়িয়ে তুলুন। বাধা যত বেশি হবে খারাপ অভ্যাসের চর্চা তত কমে যাবে।
কীভাবে ভালো অভ্যাসের সাথে লেগে থাকবেন?
দুই মিনিটের নিয়ম কি?
খারাপ অভ্যাসের কারণগুলো কীভাবে খুঁজতে হয় এবং সেগুলো সমাধান করতে হয়?
কীভাবে ভালো অভ্যাসকে অনিবার্য এবং খারাপ অভ্যাসকে অসম্ভব করে তোলা যায়? এজাতীয় শত পথের সন্ধান দিবে জেমস ক্লিয়ারের লেখা এই গ্রন্থ। আপনি যদি কোন শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষক হন অথবা কোন তরুণ-তরুণী বা গৃহিণী বা পেশাজীবী অথবা যে কেউ যারা জীবনকে সাজাতে চান,আপনার জন্য উৎকৃষ্ট সময় এখনই, আর এই গ্রন্থটি আপনাকে দিতে পারে সেই পথের সন্ধান।
প্রজন্ম প্রকাশনীর হার্ড কভারে বাঁধায় ২০০ পৃষ্টার বইটি ভাষান্তর করেছেন প্লাবন কুমার। বইটিতে লিখিত মূল্য ৩৫০ টাকা।
—–অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান