অনলাইন ডেস্ক:
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায়ও নতুন করে ১ হাজার ২৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৩৯ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৫৬ জন ও ঢাকার বাইরের ৪৮৩ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮২ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৭৫৭ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৬২৫ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৩ হাজার ২২০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৯৭৫ জন এবং ঢাকার বাইরের ৪ হাজার ২৪৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণবিজ্ঞপ্তি
চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক দুটি জরুরি সভার পর গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ১০ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে ও গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভাগুলোতে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেঙ্গু মোকাবিলায় এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর রোগ নির্ণয় সুবিধার্থে সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, টিভিতে স্ক্রল, রেডিও বার্তা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা শহরে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে ৮০০ শয্যাবিশিষ্ট ডি এন সি সি হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকাকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। সকল হাসপাতালে চিকিত্সকদের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরজনিত মৃত্যু হ্রাসে আপডেটেড ডেঙ্গু চিকিত্সা গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে।
ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কারণ পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ দ্রুত জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এই রোগের জটিলতা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। কাজেই আপনার রোগীকে জ্বর সেরে যাওয়ার পরবর্তী দুই দিন খুব ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই যা করতে হবে—শরীরের তাপমাত্রা ৩৯ সেন্ট্রিগ্রেড বা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে রাখতে হবে। এজন্য শুধু ট্যাবলেট বা সিরাপ প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে (দিনে চার বারের বেশি নয়)। কোনো অবস্থাতেই প্যারাসিটামল ব্যতীত এসপিরিন বা ব্যথানাশক এবং জ্বরনাশক বড়ি বা সিরাপ খাওয়া যাবে না। রোগীকে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন-পানি, সুপ, দুধ বা ফলের রস খাওয়াতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম রাখতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে অতিদ্রুত চিকিত্সকের কাছে যেতে হবে। তা না হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।