আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিন রহমান তন্ময়:
কবরী বেগম, বয়স-৩৬ বছর। নওগাঁ জেলা বদলগাছী উপজেলার অর্ন্তগত বদলগাছী ইউপিজি কর্মসূচির কাস্টোডোব দক্ষিণ স্পটের ননফার্ম ও ছাগল পালনের একজন সদস্য। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া দক্ষিণ পাড়ায় এক অতিদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হুজুর আলী এবং মাতা বাছিরন বেগম। ৫ বোন ও ৩ ভাই এর পরিবারে তিনি সবার ছোট। দরিদ্রতার কারণে পড়া-লেখা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রায় ১৪ বছর পূর্বে কাস্টোডোব গ্রামের রেজাউলের সাথে তিনি পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে রবিউল(১২) নামের একমাত্র পুত্র সন্তান আছে যে স্থানীয় বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়া-লেখা করছে।
দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে কবরী বেগম স্বামীর বাড়ি এসেছিলেন। তিনি ভেবে ছিলেন, বিয়ের পর হয়তো দরিদ্রতা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন, পারবেন দু’বেলা পেটপুরে খেতে। কিন্তু দরিদ্রতা সাথে যাদের নিত্য বসবাস তাদের কী এতো সহজে তা থেকে পরিত্রাণ মেলে! ইতিমধ্যেই তার কোলজুড়ে আসে একমাত্র পুত্র সন্তান। সন্তান জন্মের পর থেকে তার স্বাস্থ্য কিছুটা খারাপ হয়ে পড়ে। তিনি নিজেও ভাল ভাবে কাজকর্ম করতে পারতেন না। এই সুযোগে স্বামী রেজাউল কাউকে কোন কিছু না বলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তিনি জানতে পারেন রেজাউল আবারও অন্যত্র বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছেন। এবার তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। বাবার বাড়ি ফিরে যাবেন এমন পরিস্থিতিও সেখানে ছিল না।
এমনি এক করুণ পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার দোলাচলে তিনি যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলেন; ঠিক তখনই কাস্টোডোব গ্রামে ইউপিজি কর্মসূচি বদলগাছি শাখা থেকে ২০২৪ কোহটের সদস্য নির্বাচনের জন্য পিআরএ শুরু করা হয়। আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই কবরী বেগম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে ননফার্ম ও ছাগল পালন সদস্য হিসেবে ১৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ২৭০০০/- টাকা প্রদান করা হয়- যার মধ্যে ২০২৫০/- টাকা ছিল অনুদান এবং ৬৭৫০/- টাকা সুদবিহীন ঋণ।
আর ইতিমধ্যেই সারা দেশের ন্যায় নওগাঁ জেলায় জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নওগাঁ ইউপিজি কর্মসূচির সকল ব্যবস্থাপকদের জন্য জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং প্রশিণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অফিসে জেন্ডার ডায়ালগ ও জেন্ডার মার্কার ওরিয়েন্টশন সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও কর্মীসভা, হোম ভিজিট এবং গ্রুপ ভিজিটে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ইউপিজি কর্মসূচির ৫টি জেন্ডার ইন্ডিকেটর বিশেষ করে সদস্যদের নিজের আয় এবং পারিবারিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও সদস্যদের অপ্রচলিত পেশায় জীবিকা নির্বাহের হার বৃদ্ধি’র সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কবরী বেগম জানিয়েছেন, গ্রুপ ভিজিটে সদস্যদের নিজের আয় এবং পারিবারিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও অপ্রচলিত পেশায় জীবিকা নির্বাহের হার বৃদ্ধি’র আলোচনা আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। তখন আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি- যদি আমার নিজের নামে সম্পদ থাকতো তাহলে হয়তো এই দিনটি আমাকে দেখতে হতো না। তিনি আরো জানান, আমার আজীবন লালিত স্বপ্ন দরিদ্রতা থেকে মুক্তি’র সংগ্রাম অপ্রচলিত পেশায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই দ্রæত বাস্তবায়ন সম্ভব। এবার শুরু হয় তার জীবন সংগ্রামে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। তিনি ব্র্যাক থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে রাস্তার পাশে মুদি মালের দোকানের পাশাপাশি চা বিক্রি করতে শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে তার ব্যবসার প্রসার ঘটতে শুরু করে।
বর্তমানে কবরী বেগমের দোকানে ৩৯০০০ টাকার মালামাল, ১টি ফ্রিজ, ২টি ছাগল যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৮০০০টাকা এবং ২৫০০০ টাকা দিয়ে ৭ শতক জমি বন্দক নিয়েছেন। আর এজন্য তিনি ইউপিজি ও জিজেডি কর্মসূচির সাথে সংশ্লিস্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দরিদ্রতার কাছে হার না মেনে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে তাকে সাহস যোগানোর জন্য। ভবিষ্যতে তিনি তার ব্যবসার আরো প্রসার ঘটাতে চান, স্বপ্ন দেখেন একমাত্র সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।
কবরী বেগম, বয়স: ৩৬ বছর
ঠিকানা: গ্রাম: কাস্টোডোব, ডাকঘর: বদলগাছী, উপজেলা: বদলগাছী, জেলা: নওগাঁ