themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/projonmeralo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
পারভেজ গাদ্দাফী:
নওগাঁর আত্রাইয়ে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সীতাদেবী স্মৃতি বিজড়িত সীতাতলার মেলা। আত্রাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে নিভৃত পল্লী জামগ্রাম। একসময় বর্ষাকালে নৌকার বিকল্প কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না । শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হত। বর্তমানে পাকা রাস্তা তৈরি হওয়ার কারণে আত্রাই উপজেলা থেকে সরাসরি জামগ্রামে পৌঁছানো যায়।ভোঁপাড়া, তিলাবদুরী, শাহাগোলা হয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও ভ্যান যোগে যাওয়া যায়।পৌষ মাসের শেষ দিনে সীতা তলা মণ্ডপে রাম সীতার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন মাঘ মাসের প্রথম দিন থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা হয়ে থাকে। তবে আরো কয়েক দিনব্যাপী চলে মেলার বেচা-কেনা। মেলায় শাড়ি-লুঙ্গি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ফার্নিচার, লোহার তৈরি জিনিসপত্র, ছোটদের খেলনা,কসমেটিক, মিষ্টান্ন, বড় মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। নওগাঁসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো লোকের সমাগম হয় এ মেলায়। মেলাকে ঘিরে এলাকায় সাজসাজ রব ওঠে। আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘঠে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। বিভিন্ন ধরনের মিঠাই মিষ্টান্ন পিঠা খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
মেলা ঘিরে এলাকায় জামাই আদর রেওয়াজের শুরু হয়েছে। মেলা উপলক্ষে জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা হয়। জামাই মেলা থেকে বড় মাছ-মিষ্টি নিয়ে শ্বশুরালয়ে যান। আর শ্বশুরও জামাইকে উপহার দিয়ে থাকেন।
উপজেলার এই জামগ্রামেই সেই যুগ যুগ থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী সীতাতলার মেলা। অনেকে এই মেলাকে জামগ্রামের মেলা,পৌষ মেলাও বলে থাকে। আত্রাই পাঁচুপুরের জমিদার বাবুরা এ মেলার শুরু করলেও,বর্তমানে তা পরিচালনা করেন উক্ত এলাকার গ্রামবাসী ও স্থানীয় প্রতিনিধি। কথিত আছে, শত শত বছর পূর্বে রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতাদেবীকে এখানে বনবাস দিয়েছিলেন। আর সীতা বনবাসের এক পর্যায় জামগ্রামের এ বনে একটি প্রকান্ড বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন এবং জীবনের বাঁকি সময় এ গাছটির নিচেই তিনি কাটিয়ে দেন। গাছটির পার্শে রয়েছে এক বিরাট ইন্দারা। সীতা এই ইন্দারার পানি ব্যবহার করতেন। কথিত আছে, যে বিশ্বকর্মা এক রাতেই নাকি নির্মাণ করেছিলেন এই ইন্দারা। সীতারানী নামেই মেলার নামকরন করা হয়েছে ‘সীতাতলার মেলা’। শুরুর দিকে এটি সনাতন সম্প্রদায়ের মেলা থাকলেও বর্তমানে আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এ মেলা হিন্দু, মুসলিম সকলের যেন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
উপজেলার জামগ্রামসহ পার্শবর্তী গ্রামগুলোতে সাজসাজ রব পড়ে গেছে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের ধুম পড়েছে। দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি। প্রতি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের মিঠাই মিষ্টান্ন পিঠা ও ভালো খাবারের ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। জামগ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে এখন জামাই, মেয়ে, আত্বীয় স্বজনের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে কেন্দ্র করে জেলা সহ পার্শ্ববর্তী বগুড়া, নাটোর,জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা,রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর লোকজন এই মেলাই বেড়াতে এসে কেনা-কাটাও করে। এ ব্যাপারে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাহাবুদ্দীন বলেন, এ মেলার সুখ্যাতি উত্তরবঙ্গ জুড়ে হাওয়ায় কারনে অনেক লোকের সমাগম হয়।মেলায় আগত লোকজনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেই সাথে মেলাকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে জুয়া, লটারি বা অসামাজিক কার্যক্রম করতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি থাকবে। আশাকরছি গত বছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবে মেলা চলবে। মূল মেলা তিন দিন হলেও একদিন আগেই মেলা বসে,তা চলে আরও কয়েকদিন।