সাদেকুর রহমান বাঁধন:
নওগাঁর কৃষকরা তীব্র শ্রমিক-সংকটের কারণে মাঠ থেকে ঘরে ধান তুলতে পারছেন না। এদিকে ইদের দিন থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে ধানে দেখা দিয়েছে কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন রোগের আক্রমণ।
অপরদিকে কয়েকদিনের ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে মাঠের অধিকাংশ ধান। অনেক খেতে পানি জমে যাওয়ার কারণে জমিতেই ধানে নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে। আর লোকসানের মুখে কৃষকদের মাথায় হাত।
একমাত্র অবলম্বন কষ্টের ধান ঘরে তুলতে না পারায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা পথে বসতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাঁকা ধান কৃষকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এমন সংকট থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ভুর্তকির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসছে সচেতন মহল।
এছাড়া প্রায় ৬বিঘা জমির ধানে বৃষ্টির পানি জমে তলিয়ে থাকার কারণে জমিতেই পাঁকা ধানে চারা গাছের জন্ম নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না সেই আশঙ্কায় রয়েছেন।
তিনি প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রমিকের খোঁজ নিচ্ছেন কিন্তু প্রতি বছরের ন্যায় এবার নওগাঁর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান কাটার শ্রমিক না আসায় জেলার ১১টা উপজেলায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এই সুযোগে অল্পবিস্তর স্থানীয় শ্রমিকরা দ্বিগুন পারিশ্রমিকে কিছু কিছু কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে মোট খরচ পড়ছে ১২-১৫ হাজার টাকা আর দেরিতে ধান কাটার জন্য ফলন পাচ্ছে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-২০ মণ হারে।
এতে করে একজন কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা। আবার যেগুলো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে সেগুলো থেকে ৪ ভাগের ১ ভাগ ধান পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের পক্ষ থেকে ভুর্তকির আওতায় না আনলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক বিশেষ করে বর্গাচাষিরা ধান চাষ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব চাঁন বলেন, অন্যান্য এলাকার চেয়ে আমার এলাকার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য। এই সব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ভুর্তকির আওতায় না আনা হয় তাহলে আগামীতে দেশ চরম ভাবে ধান উৎপাদনের সংকটে পড়বে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।
এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ধান পাকলেও ধান কাটা হয়েছে ২৫ শতাংশ। জেলার বিভিন্ন মাঠের প্রায় ৭০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।
কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সকল কৃষক এক সঙ্গে ধান কাটা শুরু করা এই শ্রমিক সংকট সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।