তন্ময় রহমান:
জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন ২০২৩-এ রাজশাহী বিভাগীয় বেস্ট ফ্রিল্যান্সারের হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের হাত থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় বেস্ট ফ্রিল্যান্সার নওগাঁর শোয়াইবুল ।
শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবন নওগাঁর সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত উত্তর দূর্গাপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা ওই এলাকায়। সেখান থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে রাজশাহী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করেন।
এখন তার প্রতি মাসে গড়ে আয় ৫ থেকে ৭ হাজার ডলার। যদিও শুরু করেছিলেন ৫০ ডলার দিয়ে। বর্তমানে ২৭ বছরের এই তরুণ কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ডিজিটাল বিপণন ও ভিডিও সম্পাদনার টপ রেটেড-প্লাস ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।
সময়টা ২০১২ সাল। বয়স তখনও ১৬ পার হয়নি। সেই সময় থেকেই স্বপ্ন দেখেতেন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার। ওই বয়সে নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে ঢুকে পড়েন ফ্রিল্যান্সিং জগতে। যদিও শুরুর অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন। মুখোমুখি হতে হয় নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির। তবুও হাল ছাড়েননি শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবন। দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য আজকে তাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টা, পরিশ্রম আর ধৈর্যের সফলতায় বদলে গেছে শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবনের জীবন।
এক আলাপচারিতায় শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবন বলেন, ২০১২ সালে রাজশাহী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনলাইন থেকে টাকা আয়ের বিষয়টি জানি। এরপর ইন্টারনেটে গুগল, ইউটিউবে দেখতাম কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। প্রথমে খুব একটা ভালো বুঝতাম না। তখন বড় ভাইদের সহযোগিতা নিতাম। দিনে দিনে অনেক কিছুই শিখতে থাকি। কাজ শেখার পর কাজ পাচ্ছিলাম না। তখনও যারা পারত তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতাম।
তরুণ এই ফ্রিল্যান্সার বলেন, ২০১৭ সালে আপওর্য়াকে প্রথম কাজ পাই। সে সময় খুব একটা বেশি ইনকাম করতে পারতাম না। মাসে ৪-৫ হাজার টাকা পেতাম। কিন্তু পরিবার থেকে ফ্রিল্যান্সিং কি বুঝতো না। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে ফ্রিল্যান্সিং করা বন্ধ হয়ে যায় আমার। এরপর ময়মনসিংয়ের একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি ২০১৮ সালের শেষের দিকে। সেখানেও কম্পিউটারের কাজ করতে হতো। কাজের পাশাপাশি ইউটিউবে মিনহাজ ভাইয়ের বিভিন্ন ভিডিও দেখা শুরু করলাম।
তবে চাকরির যা বেতন পেতাম তা দিয়ে নিজে ঠিক মতো চলায় কষ্ট হয়ে যেত। তারপর আবারও সেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে ফিরে আসি এবং কাজ শুরু করি। ২০২২ সালে ২৫ মার্চে আপওর্য়াকে টপ রেটেড প্লাস হই। ৫০ ডলার দিয়ে শুরু করলেও এখন প্রতিমাসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার ডলার আয় হয়। তবে বর্তমান অবস্থায় আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীও দারুণ খুশি।
বর্তমান পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং জগতেই আছি। এছাড়াও এলাকার আগ্রহী স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা ও বেকার যুবকরা কেউ ফ্রিল্যান্সিং শিখে উপার্জন করতে চাইলে তাদের সহযোগিতা করবো।
এই তরুণ ফ্রিল্যান্সার নতুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, সময় কারো জন্য বসে থাকে না। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা এমন যে, আপনার স্কিল যত ভালো হবে আপনি তত টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর পিছনে লেগে থাকতে হবে তাহলে সফলতা আসবেই। বর্তমান সময়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। সে জায়গা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শিখে আপনি চাইলে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারবেন।
উমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন ২০২৩-এ রাজশাহী বিভাগীয় বেস্ট ফ্রিল্যান্সারের হিসেবে সে যে পুরস্কার পেয়েছে এইটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। শোয়াইবুল ইসলাম আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। আমাদের বিশ্বাস, তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখে টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়গুলো খুব গুরুত্ব দেন। যারা ফ্রিল্যান্সার হতে উৎসাহী তাদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো।