• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
  • Bengali Bengali English English
সংবাদ শিরোনাম
সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি ইসরায়েলের সঙ্গে গুগলের চুক্তি, প্রতিবাদ করায় চাকরি গেলো ২৮ কর্মীর তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন যেভাবে নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ একীভূত হচ্ছে ৩০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়টার্সের প্রতিবেদন ; ৫ মিলিয়ন ডলারে মুক্তি পেয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা করেছে ইরান ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের শক্তিশালী ৯ ক্ষেপণাস্ত্র নওগাঁয় ৪২ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার ২ মান্দায় মদপানে তিন কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নওগাঁর মান্দায় বিষাক্ত মদপানে তিন বন্ধুর মৃত্যু সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী ঈদের ৫ দিনের সরকারি ছুটি শুরু

আইভীর জনপ্রিয়তায় নৌকার জয়

প্রজন্মের আলো / ৯৮ শেয়ার
Update সোমবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক:

নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল, সেলিনা হায়াত আইভী এবারও তাঁর ব্যক্তি ইমেজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন। গতকাল রবিবার দিনশেষে ভোটের ফলাফলে সেই ধারণাই সত্যি হলো। ব্যক্তিগত কারিশমায় তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেন আইভী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের ইতিহাস গড়ে আইভি চট্টগ্রামের প্রয়াত জননেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাতারে নিয়ে গেলেন নিজেকে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পর পর তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিক, সুধীসমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবী নেতারা মনে করছেন, এই জয় বহুলাংশে আইভীর নিজের। দলকে ছাপিয়ে ব্যক্তি আইভী জয়ী হয়েছেন। তাঁর ওপর ভর করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে নৌকা।

ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, আইভী তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের চেয়ে ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোট বেশি পেয়েছেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। হাতি প্রতীকের তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।

২০১১ সালে বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। গতকাল আবার আইভীকেই তৃতীয় মেয়াদের জন্য বেছে নিল নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এর আগে ২০০৩ সালে পৌরসভার মেয়র হিসেবে আইভীকে বেছে নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জবাসী।

এবারের সিটি নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ছিল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বলেছিলেন খোদ প্রার্থীরা। তবে কোথাও উল্লেখ করার মতো গোলযোগ হয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টিতে উত্তাপও ছড়ায়নি। সব শঙ্কা উড়িয়ে রাজধানী থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। দুই প্রার্থীর চাওয়াও ছিল তা-ই। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে আনন্দিত নগরবাসীও।

নির্বাচনে জয়ী হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তৃতীয়বারের জয়ী সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি দল করি, জয় বাংলা বলব। কিন্তু দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নারায়ণগঞ্জের সেবা করব, সব মানুষের জন্য কাজ করব। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এ জয় নারায়ণগঞ্জবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করলাম।’

তবে তৈমূর আলম পরাজয়ের কারণ হিসেবে প্রশাসনিক চাপ ও ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘এই ভোটে অংশ নিয়ে আমাকে সরকারের সঙ্গে খেলতে হয়েছে। প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইভিএমের কারচুপির জন্য আজকে আমাদের এ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এ পরাজয়কে পরাজয় মনে করি না। আমি ধন্যবাদ জানাই জনগণকে, মিডিয়াকে।’

রাতে মাসদাইরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর আলম বলেন, জনগণের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। কিন্তু তারা ভোটটা দিতে পারেনি। মেশিনটা স্লো (ধীরগতির)। ভেতরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে; নইলে এত ব্যবধান হতো না।

আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজেদের পাঁচ বছর মেয়াদে এই প্রথম কোনো নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বললেন, ‘সর্বোত্তম’ নির্বাচন হয়েছে। কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোনো সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি। বিগত পাঁচ বছরে যতগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার বিবেচনায় আমাদের প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম।’

করোনাভাইরাসের অতিসংক্রমণশীল ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ভোটগ্রহণ শেষে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। নির্বাচনের আগে মহড়া (মক) ভোটের সময় নারীরা কম এসেছেন। তাই ভোটের দিন নারীদের ভোট পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে সময় লেগেছে। তবে যাঁরা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন, সবাই ভোট দিয়েছেন। কমিশনের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি। কোনো অভিযোগ কমিশনের কাছে আসেওনি।’

সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হয়েছে। তাই দ্রুত ফলাফলের খবর আসতে শুরু করে। গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকে। সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশনকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তার যখন একের পর এক কেন্দ্রে আইভীর জয়ের ফল ঘোষণা করছিলেন, তখন পুরো নগরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকে।

শহরের দেওভোগ এলাকায় আইভীর বাসভবনে বড় প্রজেক্টরে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা ভোটের ফলে জয়ের আভাস পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে নৌকা প্রতীক ও আইভীর সমর্থকরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে আইভীও বিজয়সূচক চিহ্ন দেখান।

প্রার্থী না হয়েও নির্বাচনের পুরো সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান। তাঁর ও ওসমান পরিবারের ভূমিকায় নানা জল্পনাকল্পনা ডালপালা ছড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই হালে পানি পায়নি। এর আগের নির্বাচনেও শামীম ওসমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এর পরও আইভী জয়ী হয়েছিলেন। ২০১১ সালে শামীম ওসমান নিজে আইভীর কাছে পরাজিত হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতলক্ষ্যাপারের নেত্রী আইভীর ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের নৌকা এবারও তীরে ভিড়েছে। তাঁর উন্নয়নের ওপর দল-মত নির্বিশেষে ভোটাররা আস্থা রেখেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন আইভী। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনগণ উন্নয়ন চায়। সেলিনা হায়াত আইভী দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। এই নগরীকে সন্ত্রাসের নগরী বলা হয়। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে গ্রিন সিটি উপহার দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাঁর কাছে আশ্রয় পান। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। এসব কারণে তিনি বিজয়ী হয়েছেন বলে মনে করি।’

নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তাঁরাও স্বীকার করেছেন, নারায়ণগঞ্জে আইভী দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার নেতা। দেশজুড়ে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ যখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে, তখন আইভী ব্যতিক্রম।

বিএনপি নেতারা বলেন, তৈমূর আলম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে চিত্র ভিন্ন হতো। বিএনপি দল হিসেবে তাঁকে সমর্থন না দেওয়ার প্রভাব পড়েছে ভোটের মাঠে। কম ভোটার উপস্থিতিও একটি কারণ। কম ভোটার উপস্থিতি মানেই বিএনপি ও এর জোট সমর্থকরা কেন্দ্রে কম এসেছেন।

অনেক দিন পর সুষ্ঠু পরিবেশ পেয়ে তরুণ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব বয়সের নাগরিক তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কেন্দ্রে আসেন গতকাল। ইভিএমে ভোটগ্রহণে কোথাও কোথাও বিড়ম্বনা হয়েছে। আঙুলের ছাপ না মেলায় অনেকে ভোট দিতে পারেননি। নতুন পদ্ধতিতে ভোটদানে নাগরিকদের ধারণা না থাকায় ভোটগ্রহণে ধীরগতি ছিল। তবে ভোট যে সুষ্ঠু হয়েছে, তা একবাক্যে বলেছে সাধারণ মানুষ। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বিএনপি নেতাকর্মীরাও। প্রায় সব কেন্দ্রেই তৈমূর আলমের এজেন্ট ছিলেন। তবে মাঠে ছিলেন না তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। বিএনপি যে দল হিসেবে তাঁর পাশে ছিল না, এর স্পষ্ট ছাপ ছিল ভোটের মাঠে।

গতকাল সকাল পৌনে ১১টায় দেওভোগ শিশুবাগ বিদ্যালয়ে ভোট দেন সেলিনা হায়াত আইভী। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেন তৈমূর আলম। ভোট দেওয়ার পর দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিকেলে ভোট দেন শামীম ওসমান।

নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ ও সংরক্ষিত আসনে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

Categories