অনলাইন ডেস্ক:
পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী দুটি শহর ডোনেৎস্ক-লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মধ্যে ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিবাদ বাড়ছে। এ বিবাদের সূত্র ছিলো ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান। বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করে এসেছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা করতে পারে রাশিয়া।
রাশিয়া বিষয়টি অস্বীকার করলেও শেষমেষ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরে ইতোমধ্যেই ট্যাংক মোতায়েন করেছে দেশটি। এদিকে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘শান্তি রক্ষা’য় এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জাতিসংঘে নিন্দা জানানো হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘শান্তিরক্ষা’র অর্থ হলো আরেকটি আগ্রাসন শুরু করা।
গত বছর অক্টোবরে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোতে ইউক্রেনকে নেয়া হবে না এ দাবি করতে থাকেন। কিন্তু জানুয়ারিতে তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। বর্তমানে ইউক্রেন ন্যাটোর সহযোগী দেশ। আর পশ্চিমা আধিপত্যবাদের বিরোধী রাশিয়া মনে করে, ন্যাটোর মাধ্যমে পশ্চিমাদের আধিপত্য প্রবল হয়ে উঠছে। আর তাই রাশিয়া বারবার সন্দেহ করে আসছে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারে। এর অংশ হিসেবেই দেশটির রুশপন্থী দুটি শহরে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া এবং বাজতে শুরু করেছে যুদ্ধের দামামা।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ
হোয়াইট হাউস সূত্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নতুন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞার এক নির্বাহী আদেশে সই করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনের রুশপন্থী দুটি শহরে সেনা মোতায়েনের জবাবে প্রাথমিক সাবধানতার অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানান, ইউক্রেনের দুটো শহরকে স্বাধীনতার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তাদের সার্বভৌমত্বে চূড়ান্ত আঘাত হানলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কী বলছে রাশিয়া
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া কেবল ডনবাস অঞ্চলে শান্তি রক্ষা করতে চাইছে। আর সেই কারণে পূর্ব ইউক্রেনের শহর দুটিতে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্রেমলিন জানায়, ইউক্রেনকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বলবে যে মস্কো কর্তৃপক্ষ রুশপন্থী শহর দুটিকে সহায়তা করছে।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেভেঞ্জিয়া বলেন, আকস্মিকভাবে ডোনেৎস্ক-লুহানস্ক নামে রুশপন্থী দুটি শহরকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয়নি। এর আগে ২০১৪ সালে এই দুই শহরের জনগণ স্বাধীনতার দাবি তোলার পর এ বছরই আমরা তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছি।
জাতিসংঘের বৈঠকে ইউক্রেন সংকট
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে চীনা দূত ঝ্যাং জান বলেন, ইউক্রেন সংকট সমাধানে যেকোনো ধরনের কূটনৈতিক সমাধান মেনে নেবে চীন। কেনিয়ার দূত মার্টিন কিমেনি ইউক্রেনে সংকটকে ‘ঔপনিবেশিক সময়ের আগ্রাসন’ আখ্যায়িত করে বলেন, আফ্রিকার একাধিক দেশের মানুষ ঔপনিবেশিক সময়ের অবস্থা থেকে মুক্তি পেলেও এখন পর্যন্ত বলতে পারেন না তিনি কোন দেশের নাগরিক।