• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
  • Bengali Bengali English English
সংবাদ শিরোনাম
দেশে তীব্র তাপমাত্রা, ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ল আরো ৭ দিন রোববার খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: হিট অ্যালার্টে স্কুল বন্ধ চান অভিভাবকরা বিমা কোম্পানী পরিচালনায় আসছে নতুন আইন সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি ইসরায়েলের সঙ্গে গুগলের চুক্তি, প্রতিবাদ করায় চাকরি গেলো ২৮ কর্মীর তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন যেভাবে নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ একীভূত হচ্ছে ৩০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়টার্সের প্রতিবেদন ; ৫ মিলিয়ন ডলারে মুক্তি পেয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা করেছে ইরান ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের শক্তিশালী ৯ ক্ষেপণাস্ত্র নওগাঁয় ৪২ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার ২ মান্দায় মদপানে তিন কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

এমরান মাহমুদ প্রত্যয় এর গল্প -জীবনের শেষ আয়োজন –

প্রজন্মের আলো / ২২৭ শেয়ার
Update বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

তখন দুপুর। সূর্য তার হলদে রোদের তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে। রাহাত চৌধুরী উঠানে বসে চেয়ার পেতে বসে প্রকৃতির প্রখরতা দেখছে। আর বাতাসের সাথে আলিঙ্গন করছে নিজের শরীর ও মন। গ্রামে একটু হলেও প্রভাব আছে রাহাত চৌধুরীর। ছাত্র জীবন থেকে সে ভেবেছে দেশ ও জাতির কথা। ছোট বেলা থেকে একটু লিখার হাত ছিল তার। গ্রামের প্রতিভা, তাই প্রতিভা বিকশিত না হোক! তার চলা ফেরায় ছিল অন্য রকম মাধুর্য্য। গ্রাম আর শহরের পার্থক্য খুঁজেছে প্রতিনিয়ত। দিন, মাস, বছর আর সময়ের পরিবর্তন আর বিবর্তনের চিত্রপটগুলি লালন করছে হৃদয়ে।

মফস্বলের পরে সদর। সদর মফস্বলের তুলনায় উন্নত। তাই মফস্বলের মানুষের আগ্রহী দৃষ্টি থাকে সদরের প্রতি। তেমনি সদরের মানুষেরও করুণার দৃষ্টি থাকে মফস্বলের প্রতি। আবার সব সদর এক রকম নয়। উন্নত জীবন চিত্র এর মূল বৈশিষ্ট্য। কারণ অবস্থানগত পরিবর্তনের ফলে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই পেছনের অনুন্নত ভাবি। অবজ্ঞা ও অবহেলায় তাদের প্রতি অন্য দৃষ্টি পোষন করি কেন? এর কারন কি? এই জন্যই কি এত আন্দোলন। ত্যাগ আর তিতিক্ষা? কেন? কিসের স্বার্থে এত ভেদাভেদের প্রশ্ন! ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারের তাজা রক্ত আর ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ।
রাহাত চৌধুরী একটু পিছনে ফিরে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে সেই সব দিনগুলি যা এখনও ভাবলে চোখে জল আসে। মনসপটে ভেসে ওঠে স্মৃতিময় যত আক্ষেপ।

ছোট্ট একটি চাকুরি, বিবাহিত জীবন গ্রামের সুখী পরিবার। সংসারে ফুটফুটে পুত্র সন্তান। অনাবিল আনন্দ। আসে ডাক….. ৭১ এর। শুরু হয় যুদ্ধ। পরিবার থেকে বিদায় নেয় দেশ বাঁচানোর অভিলাষে। সন্তান, পরিবার, পরিজন, মমতা, ভালবাসাকে ত্যাগ করে যুদ্ধের ময়দানে। যুদ্ধ স্বাধীনতার জন্য, দেশ রক্ষার জন্য। মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীনতা। যুদ্ধ শেষ।

গ্রামে ফেরার পালা প্রিয়জনের কাছে। স্বাধীনতার সূর্য মাথায় নিয়ে। সবুজের বুকে লালের উৎভাস। ধীর গতিতে পেরিয়ে গেল অনেক গুলি বছর। অতীত সবই অতীত। সময়ের তাড়াই সবাই ব্যস্ত।

চৌধুরী সাহেবের ছেলে বউ সবাই চাকুরিজীবী। সেই সুবাদে শহরে থাকতে হয় রাহাত চৌধুরীকে। নাতি নাতনি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। শহরের পরিবেশ ভাল লাগে না তার। তারপরও কারণ বার্ধক্য মানুষকে অনেক কিছু হতে বঞ্চিত করে। বই পড়ে, খবর দেখে, আর নাতনিদের সাথে গল্প করে সময় কাটায়। গল্প শোনায় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি চারণ। এ যুগের আধুনিক মর্ডান ছেলে-মেয়ে যারা ভাল করে বাংলা বলতে পারেনা, ইংরেজীর অদলে কথা বলে। শুনলে গা-টা জ্বলে যায়। কি প্রয়োজন ছিল মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়ার? আর স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ। আজ কেন জানি নিজেকে বোঝা মনে হয় নিজেরই কাছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কি মূল্য তার এই সমাজে। গ্রামে ফিরতে মন চাই। গ্রামের আলো বাতাস প্রকৃতি। ফিরতে চাইলেই তো ফেরা যায় না। সময় চলে তার আপন গতিতে। এরই আবর্তে দেশের ছোট একটি দৈনিকে “মুক্তিযোদ্ধার চেতনার” নামে ফিচার প্রকাশ হয় রাহাত চৌধুরীর। প্রকাশ পায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। চোখের পলকে উল্টে যায় তার জীবন চিত্র। শুরু হয় সাক্ষাৎকার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও মিডিয়ায়। তার স্বপ্ন গ্রামের নিরীহ অসহায় মানুষের পাশে থাকা। সম্মান আজ সর্বত্র।

রাহাত চৌধুরী ভাবে, মনে মনে হাসে, আবার বিষন্নতায় একাকার হয়। সে তো দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা নয়, হাজারো হাজার মুক্তিযোদ্ধা কি করছে? এ দেশে কে জানে? কে রাখে কার খবর? কৃষক শ্রমিক তারাও তো মুক্তিযোদ্ধা। নয় মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। তবে কেন? এত মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। দেশের নৈরাজ্য বেড়েছে সন্ত্রাস, ছিনতাই, খুন,ধর্ষন, নির্যাতন এখন এগুলো কিছুই না।

আজ অনেক দিন পর গ্রামে রাহাত চৌধুরীর পরিবার। ছায়া সুনিবিড় মুক্ত বাতাস, যেন এক নতুন উৎভাসিত দিনের সূচনা। চেনা মুখ হলেও তিনি এখন নতুন ব্যক্তিত্ব। নাতি, নাতনি, ছেলে, বউ, আত্মীয়-স্বজন যেন একটি বিয়ে বাড়ি নব ঢেউ।
কেন জানি কিছু ভাল লাগছে না রাহাত সাহেবের উদাস, নিঃসঙ্গ, একাকিত্ব তাকে গ্রাস করছে। আনন্দ শুধু রাহাত সাহেবের বাড়ীতে নয় পুরো গ্রামে।

এই রাত হলেই সেই কাঙ্খিত দিন ১৬-ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। যত আয়োজন সব রাহাত চৌধুরীর জন্য। সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাকে। আজ এতদিন পর শেষ জীবনে। গ্রামের স্কুল মাঠে, সাথে দেওয়া হবে দু’লক্ষ টাকার চেক আর সম্মাননা ক্রেস্ট। এলাকায় বিশাল আয়োজন মঞ্চ, এমপি, মন্ত্রিদের পদচারণা।

ঘটে যায় অন্য ঘটনা, মধ্য রাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে রাহাত চৌধুরি আকাশে বাতাসে কান্নার রোল ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ঢল সব আয়োজন শেষ। এখন মেষ আয়োজনটুকু বাঁকী।

ভুলে যায় সবাই ভুলের এই পৃথিবীতে। একই ধারায় চলেছে জীবন। এই পৃথিবীর বুকে। একটি যুদ্ধ, একটি মানুষ………..। সুখ, আনন্দ, দুঃখ জীবনের শেষ আয়োজন।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

Categories