প্রজন্মের আলো ডেস্ক:
চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গতকাল বুধবার এক ঘোষণায় এ কথা বলেন তিনি। প্রচণ্ড গণবিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার অনুরোধে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশটির বিদ্যমান মন্ত্রিসভার অবসান ঘটে।
এদিকে জরুরি ভিত্তিতে নতুন সরকার নিয়োগ দেওয়া না হলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নন্দলাল উইরাসিংঘে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে মানুষ। সোমবার ব্যাপক সহিংস প্রতিবাদের পর কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাসদস্য ও পুলিশকে কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের ‘দেখামাত্র গুলি’ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, এবং দেশকে বিশৃঙ্খলায় পতিত হওয়া থেকে উদ্ধারে’ তিনি এ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগ দেবেন ‘যেটি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠকে নির্দেশনা দিতে পারবে এবং দেশের মানুষের ভরসা অর্জন করতে পারবে। ’
গোতাবায়া আরো বলেন, ‘এরপর, এক সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে আসা হবে যা পার্লামেন্টের হাতে আরো ক্ষমতা ন্যস্ত করবে। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে নতুন কর্মসূচি তৈরি এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। ’
এর আগে এক টুইটে রাজাপক্ষে সব শ্রীলঙ্কানকে ‘এই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন পাড়ি দিতে হাতে হাত মেলানোর’ আহ্বান জানান। কিন্তু দেশটির প্রধান বিরোধী দল এসজেবি পার্টি জানিয়ে দিয়েছে, রাজাপক্ষে যতক্ষণ প্রেসিডেন্ট থাকবেন, তারা কোনো সরকারের অংশ হবে না।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ভাষণের আগে গতকালই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নন্দলাল উইরাসিংঘে বলেন, শুক্রবারের মধ্যে নতুন প্রশাসনের দেশের দায়িত্ব নেওয়াটা জরুরি। না হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে গোটা দেশকে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়বে এবং একে বাঁচানোর মতো কেউ থাকবে না। ’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান আরো বলেন, ‘আমি যখন এক মাস আগে দায়িত্ব নিই, দেশ তখন দ্রুত পতনের দিকে যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম আমরা এর রাশ টানতে পারব। কিন্তু সোমবারের ঘটনার পর রাশ টেনেও আর কোনো কাজ হবে না। ’
এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই উইরাসিংঘে শ্রীলঙ্কার পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ প্রশ্নে নিজেদের খেলাপি ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়ে দেন, ঋণদাতাদের দেওয়ার মতো কোনো অর্থ শ্রীলঙ্কার হাতে নেই।
গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার রাজধানীকে অনেকটাই পরিত্যক্ত রূপে দেখা যায়। বিভিন্ন চেকপয়েন্টে দেখা মেলে দায়িত্বরত সেনাদের। এ ছাড়া রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় সরকারবিরোধীদের পুড়িয়ে দেওয়া একাধিক বাস। প্রেসিডেন্টের সমুদ্রমুখী কার্যালয়ের সামনে কারফিউ ভঙ্গ করে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে কিছু মানুষকে।
সেনা অভুত্থানের গুঞ্জন নাকচ
এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই গুঞ্জন রটে—সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে। পরে শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে এ গুজব প্রত্যাখ্যান করেন। প্রতিরক্ষাসচিব কমল গুনারত্নে বলেন, ‘কখনো চিন্তাও করবেন না যে আমরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছি। সামরিক বাহিনীর এ রকম কোনো উদ্দেশ্য নেই। ’
পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে দুই শরও বেশি।
এর আগে মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানান পার্লামেন্টের স্পিকার। সূত্র: এনডিটিভি, এএফপি