• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন
  • Bengali Bengali English English
সংবাদ শিরোনাম
ইসরায়েলের সঙ্গে গুগলের চুক্তি, প্রতিবাদ করায় চাকরি গেলো ২৮ কর্মীর তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন যেভাবে নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ একীভূত হচ্ছে ৩০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়টার্সের প্রতিবেদন ; ৫ মিলিয়ন ডলারে মুক্তি পেয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা করেছে ইরান ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের শক্তিশালী ৯ ক্ষেপণাস্ত্র নওগাঁয় ৪২ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার ২ মান্দায় মদপানে তিন কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নওগাঁর মান্দায় বিষাক্ত মদপানে তিন বন্ধুর মৃত্যু সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী ঈদের ৫ দিনের সরকারি ছুটি শুরু ঈদুল ফিতর বৃহস্পতিবার

ব্যালে বালিকার নৃত্যকলা ভাইরাল, মুগ্ধ সংস্কৃতিপ্রেমীরা

প্রজন্মের আলো / ১৩৫ শেয়ার
Update শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

সাদেকুর রহমান বাঁধন:

তার পরিচয় আটকে নেই নওগাঁ জেলায়। তার নাম দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। তার পরিচয় এখন ‘ব্যালে বালিকা’। নাম মোবাশ্বিরা কামাল ইরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে তার ব্যালে নৃত্যকলা দারুণ মুগ্ধতায় ডুবিয়েছে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের। কেউ তাকে দিচ্ছেন ‘উচ্ছল মুক্ত বিহঙ্গ’ উপাধি। কেউ বলছেন ‘বাংলার উড়ন্ত মানবী’। কারও মতে ‘আগুন ডানার পাখি’। কেউবা তার নৃত্যের প্রকাশকে বলছেন ‘নারীমুক্তির অভিব্যক্তি’ হিসেবে।

আবু হায়াৎ মোহাম্মদ কামাল ও ফাহমিদা আক্তার দম্পতির চার মেয়ের মধ্যে মোবাশ্বিরা কামাল ইরা তৃতীয়। বাবা ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। নওগাঁ সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে বাণিজ্য শাখায় পড়ছেন ইরা। এর আগে ২০২০ সালে নওগাঁ সীমান্ত পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

শৈশব থেকেই ইরা ছিলেন অদম্য মেধাবী ও চঞ্চল প্রকৃতির। বেড়ে ওঠা নওগাঁ শহরেই। বরাবরই নাচ করতে ভালোবাসেন। শৈশবে শিক্ষক সুলতান মাহমুদের কাছে নাচ শিখেছেন। পরে ঢাকায় ভরতনাট্যম শেখেন। তবে ব্যালে নৃত্যের ভাবনা মনে আসে ২০২০ সালের লকডাউনের সময়। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখতে শুরু করেন ব্যালে। এজন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। ২০২১ সালে সাধনা নামে একটি নাচের সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন ইরা।

এর মধ্যে পরিচয় হয় ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার জয়িতা আফরিনের সঙ্গে। তিনি থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। গত ২০-২২ জানুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নৃত্য উৎসবে যোগ দিতে এসে জয়িতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইরা। দুজনে ফটোগ্রাফির আলাদা একটা অর্থ তৈরি করার চিন্তা করছিলেন। ২৩ জানুয়ারি সকালে দুজনে বেরিয়ে পড়েন। এমন সময় চোখে পড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাশে চলমান বিভিন্ন আন্দোলনের প্ল্যাকার্ড-পোস্টার। সেখানে কয়েকটি ফটোশুট করেন। পরে ২৫ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে ফেসবুকে আপলোড দেয়া হয়। সে ছবিগুলোই ছড়াতে ছড়াতে এখন সবার মুখে মুখে ইরার নাম।

ইরা বলেন, লকডাউনের সময় ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে আপলোড করতাম। সেখান থেকে সাগর দেবনাথ নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার ইচ্ছা ছিল এ ধরনের (ব্যালে) ফটোশুট করার। আমিও সমর্থন দিলাম। তারপর ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে কিছু ফটোশুট করলাম। তারপর জয়িতা আফরিন আপু ছবিগুলো দেখেন এবং তিনিও এ ধরনের ছবি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে পোষণ করেন। গত বছরের ২ নভেম্বর ধানমন্ডির লেকের পাড়ে ফটোশুট করা হয়। সেই ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোডের পর মোটামুটি ভালো একটা সাড়া পাওয়া যায়। তারপর থেকে ঢাকার বিখ্যাত বিভিন্ন জায়গায় ফটোশুট করার পরিকল্পনা করি আমরা।

সম্প্রতি যে ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছে সেগুলো প্রসঙ্গে ইরা বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল আমরা যেহেতু স্বাধীন দেশের নাগরিক, স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করার। আমার কাছে রাজু ভাস্কর্য মনে হয়েছিল স্বাধীনতা এবং মুক্তির প্রতীক। সেই চেতনা থেকেই সেখানে ফটোশুট করা।

নৃত্যশিল্পী ও গবেষক এবং ‘সাধনা’ সংগঠনের লুবনা মরিয়মকে আদর্শ হিসেবে মানেন মোবাশ্বিরা কামাল ইরা। তিনি বলেন, লুবনা মরিয়মকে খালা বলে সম্মোধন করি। তার সঙ্গে গত বছর থেকে কাজ করছি। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করেন। তার কাজ আমার খুবই ভালো লাগে। তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি যেমন নাচ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, আমিও নাচ নিয়ে পড়াশোনা করে রিসার্চ করতে চাই।

ভবিষ্যৎ ভাবনা জানিয়ে ইরা বলেন, ভালোভাবে পড়াশোনা করে এইচএসসি পাস করতে চাই, যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। সেখানে নাচ নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। যেন নাচের মাধ্যমে কথা বোঝাতে পারি। আমাদের চলার অঙ্গভঙ্গি সবখানেই নাচের ব্যবহার আছে। নাচকে সমৃদ্ধ করে মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই।

ইরার মেঝ বোন জুয়াইয়া কামাল অর্ক। পড়াশোনা করছেন রাজশাহী হোমিও কলেজে। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই চেষ্টা করেছি ছোট বোন ইরার মতো ব্যালে করতে। কিন্তু সেটা না পারায় আফসোস থেকে গেছে। আশা করছি, সে আরও ভালো করবে।

ইরার মা ফাহমিদা আক্তার বলেন, মেয়ের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকায় আমি চেষ্টা করেছি এ জায়গা পর্যন্ত পৌঁছানোর। ২০১৭ সাল থেকে তার নাচে হাতেখড়ি। মেয়ের একটার পর একটা সাফল্য আসতে থাকে। কোথাও তাকে থেমে থাকতে হয়নি। তার প্রতিভা দেখে আমারও আগ্রহ বাড়তে থাকে যে—যদি একটু সহযোগিতা করা যায়, মেয়ে হয়তো আরও ভালো করতে পারবে।

ইরার নাচের শিক্ষক ও নওগাঁর ‘নৃত্য রং একাডেমি’র প্রশিক্ষক সুলতান মাহমুদ বলেন, মোবাশ্বিরা কামাল ইরা ছোট থেকেই আমার কাছে নাচ শিখেছে। সব শিক্ষার্থীকে আমি আমার সন্তানের মতো ভালোবাসি। হাতেগোনা যে কয়জন প্রথম সারির শিক্ষার্থী রয়েছে সে তাদের মধ্যে একজন। সে খ্যাতি অর্জন করে নওগাঁবাসীর মুখ উজ্জ্বল করবে এটাই আমার চাওয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

Categories