অনলাইন ডেস্ক:
মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যবসা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির গণশুনানিতে হাজারো অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। অপারেটরগুলোর একাধিক প্যাকেজ নিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, একাধিক প্যাকেজের কারণে গ্রাহকেরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। ডাটা প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে দামও কমার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। দাম নিয়েও আপত্তি করেছেন অনেকে। আবার বেশি প্যাকেজ থাকায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন কিছু গ্রাহক। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় বিটিআরসিতে এই শুনানির আয়োজন করা হয়। অনলাইনেও কেউ কেউ মতামত দেন।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এবং মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বিক্রমপুর থেকে আসা টেলিটক সিম ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক বলেন, টেলিটকের ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এজন্য আগে নেটওয়ার্ক ঠিক করতে হবে, পরে প্যাকেজের বিষয়টি আসবে। আগে কাভারেজ পরে প্যাকেজ। রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা এক গ্রাহক বলেন, এত প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহককে কনফিউজড করা হয় কেন? নেটওয়ার্ক নিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে নেটওয়ার্কও থাকে না।
এ বিষয়ে একজন গ্রাহক বলেন, আনলিমিটেড প্যাকেজে অনেক উপকার হয়েছে। কারণ যারা বেশি ডাটা ইউজ করি তারা প্যাকেজ নেওয়ার কথা ভুলে যাই। ফরিদ উদ্দিন নামে একজন গ্রাহক বলেন, এত প্যাকেজ নিয়ে গ্রাহক বিভ্রান্ত হয়। তিন দিন, সাত দিন ও ৩০ দিন করা যায় কিনা বিটিআরসি এ বিষয়টি দেখতে পারে। দিনাজপুর থেকে আসা আবু রায়হান নামে একজন গ্রাহক বলেন, প্যাকেজের মেয়াদ এক দিন, তিন দিন, পাঁচ দিন তুলে দিয়ে সর্বনিম্ন সাত দিন মেয়াদ রাখা হোক। সিমের মালিকানা বদল নিয়ে তিনি বলেন, ছয় মাস ব্যবহার না করলে সিমটি রিজেক্টেড হয়ে যাবে, এটা কেমন ধরনের কথা। তাহলে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হোক। বর্তমানে একজন গ্রাহক ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারে। সে তো ১৫টি সিম এক সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবে না। এ বিষয়ে বিটিআরসির নাসিম পারভেজ বলেন, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য নেয়। একেক অপারেটরের একেক সুবিধার কারণে সিম নেয়। এখন যদি সংখ্যাটা কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেই সুযোগ আর থাকবে না।
একজন ছাত্র বলেন, টেলিটকের ব্যাপারে আরেকটু গুরুত্ব দিলে মানুষ উপকৃত হবে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে অনলাইনে অংশ নেওয়া ছাত্র রায়হানুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে নেটওয়ার্কও পাই না। গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসির মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ বলেন, আমরা প্যাকেজ কমিয়েছি, আরো কীভাবে কমানো যায় তা দেখব। আপনারা যদি প্রমাণ দিতে পারেন, কোন অপারেটর চারটির বেশি কমার্শিয়াল এসএমএস দিয়েছে, আমাদের জানাবেন আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেব।
এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, ১৮ কোটি গ্রাহকের মধ্য থেকে যদি ১০০ বা ১৫০ গ্রাহকের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেই তাহলে সেটা যুক্তিযুক্ত হবে না। ‘এক দেশ এক রেট’ করে ভালো কিছুর পরিবর্তে অন্য কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি কি না, সেটা চিন্তা করার বিষয় আছে। ইয়ং জেনারেশন বিভিন্ন প্যাকেজ খোঁজে, তারা একাধিক অপারেটরের সিম ব্যবহার করেন। রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, প্যাকেজের সংখ্যা নিয়ে কিছু ভ্রান্তি আছে। কাস্টমারের কাছে কত প্যাকেজের চাহিদা সেটা মূল বিষয়। ১৮ কোটি গ্রাহকের ১৮ কোটি প্যাকেজের চাহিদা আছে। গ্রাহককে সবগুলো প্যাকেজ অফার করা হয় না। আমরা কাস্টমার ভেদে প্যাকেজ অফার করি। সীমা বেঁধে দিলে প্রতিযোগিতার ক্ষতি হবে।
গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত বলেন, আমরা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি উইন উইন সিচ্যুয়েশনে যেতে পারব। বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বছরখানেক আগে সবাই দামের কথা বলত। এখন দামের কথা বলে না, বলে মানের কথা। জ্বালানির দাম বেড়েছে, আমাদের যেন খরচটা না বাড়ে। আমরা ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি তরঙ্গ কিনতে। মান আরো কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, প্যাকেজ, ডাটার মেয়াদ এবং মূল্য নিয়ে বেশি উদ্বেগ। তিনটি বিষয়কে কীভাবে সমন্বয় করা যায় সেটা দেখতে হবে। মোবাইল ডাটার ক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যাশা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ডাটার ক্যারি ফরোয়ার্ড কীভাবে করা যায় সেটি বিটিআরসি ইতিবাচকভাবে দেখবে। প্যাকেজের বিষয়টাও দেখবে। মানুষের ভোগান্তি যে কোনো মূল্যে দূর করতে হবে। সূত্র:ইত্তেফাক