• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
  • Bengali Bengali English English
সংবাদ শিরোনাম
মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৩৪.৮৭ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় পাঁচ বছরে ব্যয় বেড়েছে তিন গুণ: গবেষণা ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল রাজধানীর কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের ২২০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না: জাতিসংঘ অবন্তিকার মৃত্যু; সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী আটক জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজে আরও জলদস্যু উঠেছে, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বিশিষ্টজন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪ গাজায় ইফতারের লাইনে দাঁড়ানো মানুষের উপর গুলি, নিহত ৬ শান্ত-মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সহজ জয় জাহাজ অপহরণ ৫০ লাখ ডলার দাবি জলদস্যুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ হাইকোর্টের রমজানে খোলা থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রথম প্রকাশ হয়

প্রজন্মের আলো / ১৫৯ শেয়ার
Update বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (বামে), লোকেন্দ্রনাথ পালিত (মাঝে) এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ডানে)

  । মো. সফিকুল ইসলাম।

 

রাজশাহীর মাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কাছে টেনেছিল তাঁর শৈশবেই। রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম লেখা প্রকাশ হয়। সৃষ্টির সূচনা এখান থেকেই। কবির বয়স যখন চৌদ্দেরও কম, তখন তাঁর প্রথমকাব্য বনফুল ছাপা হয় শ্রী কৃষ্ণদাস সম্পাদিত রাজশাহীর ‘জ্ঞানাঙ্কুর’ পত্রিকায়, মার্চ ১৮৮০ সালে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্য প্রবন্ধ ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভা’ এবং ‘অবসর সরোজিনী ও দুঃখসঙ্গিনী’ প্রকাশ হয় জ্ঞানাঙ্কুরে।

কিশোর কবি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-প্রচারে রাজশাহীর জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকার অবদান অনন্য-গৌরবের। কবিগুরু উচ্ছাসভরে জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞায় বলেন, ‘কাগজের নামের উপযুক্ত একটি অঙ্কুরোদ্গত কবিও কাগজের কর্ত্তৃপক্ষেরা সংগ্রহ করিলেন। আমার সমস্ত পদ্যপ্রলাপ নির্বিচারে তাঁহারা বাহির করিতে শুরু করিয়াছিলেন।’  রাজশাহীর যে দু’টি পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়মিত প্রকাশ হতো তার একটি ‘জ্ঞানাঙ্কুর’, অপরটি ‘উৎসাহ’।

রাজশাহীর মাটিতে বসে কবিগুরুর অমরসৃষ্টি : 

এবার ফিরাও মোরে, প্রতীক্ষা, দুর্বোধ, সুখ, ঝুলন, সমুদ্রের প্রতি, সে আমার জননী রে, ভিখারি, মাতার আহ্বান, আশা, প্রার্থনাতীত দান, গৃহলল্মী ইত্যাদি কবিতা এবং মন প্রবন্ধটি এবং রাজশাহীতেই প্রকাশিত। কবির বিখ্যাত রচনা ‘পঞ্চভূতের ডায়ারি’ পরিকল্পনা রাজশাহী বসেই করেছেন বলে তাঁর সফরসঙ্গী প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন। কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় বলেছেন, তিনিই (অক্ষয়কুমার) ছিলেন কবির কল্পনার পঞ্চভূতের এক ভূত।
কবিগুরুর শিক্ষাবিষয়ক শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ‘শিক্ষার হের-ফের’ রাজশাহীতেই রচিত। রাজশাহী এসোসিয়েশন আয়োজিত রাজশাহী কলেজে এক সুধী সমাবেশে প্রবন্ধটি কবিগুরু পাঠ করেন ১২ অগ্রহায়ণ ১২৯৯ বঙ্গাব্দে (২৬ নভেম্বর ১৮৯২)।

নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় রাজশাহী এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কবিগুরুকে প্রবন্ধ পাঠে আমন্ত্রণ ও অনুরোধ করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে, ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রাজশাহী এসোসিয়েশনের সম্পাদক হিসেবে এবং ইতিহাস-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজ-পরিবারেরর সন্তান দয়ারামপুরের রাজা কুমার শরৎকুমার রায় এই সুধী সমাবেশ আয়োজনের অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশে নওগাঁর পতিসর, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জমিদারী পরিচালনা করেছেন এবং সুযোগ বুঝে রাজশাহীতে আসতেন।

কবিবন্ধু পালিতের আমন্ত্রণে ১৮৯২ সালে ১২ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজশাহীতে প্রথম আসেন। এ সফরেই কবিগুরু ১৮ দিন (২৯ কার্তিক থেকে ১৬ অগ্রহায়ণ, ১২৯৯ বঙ্গাব্দ) রাজশাহীতে  অবস্থান করেন। এই সময়ের অল্প আগে মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের নাটোরের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সাথে অক্ষয়কুমারের পরিচয় ঘটে এবং পরবর্তীতে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়। এরপর, আরও অন্তত চার বার কবি রাজশাহী এসেছেন বলে জানা যায়। রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেড়াতে এলে বন্ধু পালিতে বাসায় থেকে তাঁর আথিত্য-গ্রহণ করতেন এবং পদ্মায় নৌভ্রমন করতেন।

রাজশাহীর জীবনধারার সাথে কবির অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে প্রধানত দুইজন অন্তরঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। একজন ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, অপরজন লোকেন্দ্রনাথ পালিত। পালিত তখনকার রাজশাহী  জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর। সে-সময় রবীন্দ্রনাথ, অক্ষয়কুমার, পালিত, নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ, কান্তকবি রজনীকান্ত সেন, কুমার শরৎকুমার রায়, ঐতিহাসিক রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমুখকে ঘিরে রাজশাহীতে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছিল।

সিরাজদ্দৌলা-সহ বহু অমরগ্রন্থের রচয়িতা ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের ইতিহাসচর্চা কবিগুরুকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। অক্ষকুমারের ইতিহাস-সাধনার প্রধান অনুপ্রেরণায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উভয়ে উভয়ের সৃষ্টিকর্মের অনুরাগী ও সহযোগী।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ও কবিগুরু বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুমাত্রিক গুণকাজ করেছেন একসাথে। বয়সে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কয়েক মাসের বড় অক্ষয়কুমার। তাঁদের মধ্যে যে মানসিক সাযুজ্য গড়ে উঠেছিল, তার মূলে ছিল প্রতিভার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশুদ্ধ ইতিহাস-প্রিয়তা।

কবিগুরুর সহযোগিতায় অক্ষয়কুমার নিজ সম্পাদনায় রাজশাহী শহরের ঘোড়ামারা থেকে ১৮৯৯ সালের ৫ জানুয়ারি প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক পত্রিকা ঐতিহাসিক চিত্র। অক্ষয়কুমারের অনুরোধে ঐতিহাসিক চিত্রের প্রথম সংখ্যার ‘সূচনা’ নামে সম্পাদকীয় লিখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐতিহাসিক চিত্র-ই বাংলার প্রথম ইতিহাসভিত্তিক পত্রিকা।

তথ্যসূত্র :

১. রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথ, ফজলুল হক, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, ২০১৬ খ্রি.।
২. Journal of The Varendra Research Museum, Vol.- 7, 1981-82 (published- 1985), A. K. Maitra Number, Editor- Mukhlesur Rahman, Varendra Research Museum, Rajshahi University, Rajshahi.
৩. কাজী মোহাম্মদ মিছের, রাজশাহীর ইতিহাস (১ খ- ও ২য় খ-), কাজী প্রকাশনী, বগুড়া, ১৯৬৫ খ্রি., গতিধারা প্রকাশনী সংস্করণ, ঢাকা, ২০০৭ খ্রি.।
৪. কালীনাথ চৌধুরী, রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, রাজশাহী, ১৯০১ খ্রি.,গতিধারা প্রকাশনী সংস্করণ, ঢাকা, ২০১১ খ্রি.।
৫. খোন্দকার সিরাজুল ইসলাম-সম্পাদিত, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় সার্ধশত জন্মবার্ষিকী ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা জন্মবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ, রাজশাহী, ২০১৩ খ্রি.।
৬. গোলাম মুরশিদ, রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ।

লেখক : উপ-রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

Categories