এমরান মাহমুদ প্রত্যয়:
বসন্তের শুভ সকাল, একটু রাত জেগে ঘুম থেকে দেরিতে উঠা, যেন বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঘুম ভাঙলো গ্রামের চির চেনা পাখির কিচিরমিচির ছেলে মেয়েদের কোলাহল আর গ্রামীণ ভাটিয়ালি সুরে –এই ‘শিলপাটা ধার কাটা”
বাহিরে বের হয়ে দেখি অনেক বেলা হয়েছে। আমার উঠানে বসে শিলপাটায় ধার কাটছেন ৭০-৮০ বছরের এক বৃদ্ধ।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার মো.কাসেম আলী মন্ডল। তিনি প্রায় দশ বছর ধরে শিলপাটা ধার কাটানোর কাজ করে আসছেন। এতে যা আয় আসে তা দিয়েই চলে তার সংসার।
বর্তমানে তিনি উপজেলা সহ পাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ কাজ করছেন। তার সংসারে রয়েছেন স্ত্রী ও সন্তান।
মো. কাসেম আলী বলেন, এ পেশায় নিয়োজিত থেকে বেশ কিছু বছর পার করলাম । আগে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০টি পাটা ধার কাটা হতো। এতে আয় ভালো হতো। তা দিয়েই ছেলেমেয়েদের খরচসহ সংসারের অন্যান্য ব্যয় বহন করতে সমস্যা হতোনা। আগে কৃষি খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। এখন ভারি কাজ করতে পারি না তাই এই কাজ ই আমার বেঁচে থাকার ভরসা।
তিনি খোদাই করে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন মাছ, ফুল-ফল ও প্রাণির চিত্র। তিনি আরো বলেন, মাসিক আয় হওয়ার কথা অনেক। কিন্তু মাসব্যাপী কাজ না থাকায় মাসিক আয় যা হয় তা দিয়েই কোন রকমে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়।
কাসেম বলেন, আয়ের লক্ষ্যে ও কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।আধুনিক যুগ সব বদলেছে, আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে বদলেছে মানুষের চাহিদা মত মন মানসিকতা। মানুষের মুখরোচক খাবার তৈরিতে সহায়তা করলেও আমার জীবনমানের রুচির কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। তবে এতে কোনো দুঃখ নেই, যদি আল্লাহ সুস্থ রাখেন এ কাজ করেই বাকি জীবন কাটাবো।
স্থানীয় বাসিন্দা সাগর, রকেট, নার্গিস সুলতানা, আরজুমানসহ অনেকে জানান, আধুনিকতা ও যান্ত্রিকতার দাপটে গৃহস্থালি আগেকার বিভিন্ন আসবাবপত্রের বিলুপ্তি ঘটলেও শিলপাটা এখনো গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বিদ্যমান।শহরে শিলপাটা বিলুপ্তি হলেও গ্রামে শিলপাটার বিলুপ্তির কোনো সুযোগ নেই। এটি আজীবন থাকবে।
তারা জানান, আগে ঘনঘন শিলপাটাতে ধার কাটতে হতো। এখন অনেক গুড়া মশলা বর্তমানে কিনে পাওয়া যায়। তাই প্রতি চার থেকে পাঁচ মাস পরপর শিলপাটার ধার কাটাতে হয়। নাহলে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মুখরোচক বিভিন্ন মসলা পিষতে কষ্টকর হয়।