ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই। একটু অসচেতন হলেই ফেঁসে যেতে পারেন সাইবার অপরাধের জালে। জেনে হোক বা না জেনে, অনলাইনে কোনো অপরাধ করলে দিতে হয় কঠিন মাশুল।
অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতারণা, যৌন হয়রানিসহ আরও অনেক ধরনের অপরাধ বাংলাদেশে আগে থেকেই সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ শঙ্কার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব অপরাধের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করেন অপরাধীরা।
সাইবার অপরাধ কী ?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮ অনুযায়ী, ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, কোনো স্ট্যাটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে।
কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হুমকি দিলে, অশালীন কোনো কিছু পাঠালে কিংবা দেশবিরোধী কোনো কিছু করলে তা সাইবার অপরাধ বলে গণ্য হবে। আবার ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হ্যাক করলে, ভাইরাস ছড়ালে কিংবা কোনো সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে সাইবার অপরাধ হতে পারে। এছাড়া অনলাইনে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তা-ও সাইবার অপরাধ হবে।
সাইবার অপরাধে জড়িতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। ফেসবুক হ্যাকিং, কারও সম্মানহানি, ব্ল্যাক মেইল, পর্নোগ্রাফিসহ নানা অপরাধে বয়স্কদের জড়িত থাকার পরিমাণ কম। প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। এ সময় বেড়েছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-তরুণরা ঘরবন্দি সময় পার করছেন। পড়াশোনা না থাকায় সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছেন তারা।
সাইবার অপরাধ দমনে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
দেশে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় গঠন করা হয় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাংগঠনিক কাঠামোতে যোগ করা হয় ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’ নামের ইউনিটটি। বর্তমানে এখানে তিনটি উইং কাজ করছে। সাইবার মনিটরিং ও সাইবার ইন্টেলিজেন্স, সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও সাইবার সাপোর্ট সেন্টার। সাইবার মনিটরিং ও ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার সাপোর্ট সেন্টার ২৪ ঘণ্টা কাজ করে। প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন হাজার অভিযোগ আসে। প্রতারণা, হুমকি, হ্যাকিং, পর্নোগ্রাফি, আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগই বেশি। এসব অপরাধের অধিকাংশ ভুক্তভোগী হলেন নারী। তারা সাইবার পুলিশ সেন্টারের ই-মেইল, ফেসবুক অথবা ইমোতে ফোন করে অভিযোগগুলো দেন।
সাইবার অপরাধে কিশোর-তরুণদের সংখ্যা কেন বাড়ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সাইবার ইন্টেলিজেন্স) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) সাঈদ নাসিরুল্লাহ মিডিয়াকে বলেন, সাইবার অপরাধে জড়িতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই কিশোর-তরুণ। ফেসবুক হ্যাকিং, কারও সম্মানহানি, ব্ল্যাক মেইল, পর্নোগ্রাফিসহ নানা অপরাধে বয়স্কদের জড়িত থাকার পরিমাণ কম। প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। এ সময় বেড়েছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-তরুণরা ঘরবন্দি সময় পার করছেন। পড়াশোনা না থাকায় সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছেন তারা।
আপনার সন্তানকে কীভাবে সুরক্ষা দিবেন?
সন্তান কী করছে, কী দেখছে, কী ব্যবহার করছে, কার সঙ্গে তার ডিজিটাল প্লাটফর্মে সখ্য গড়ে উঠছে, এগুলো খেয়াল করা। প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। অভিভাবকদের এমন কিছু করে রাখা যাতে সন্তান খারাপ সাইটে বা গ্রুপে তৎপর হলে সঙ্গে সঙ্গে নোটিফিকেশন পান বা জানতে পারেন। এজন্য ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহারে প্যারেন্টাল গাইডেন্স (অভিভাবকের নির্দেশনা) দরকার। সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার ল সম্পর্কে নিজে জেনে সন্তানদের জানাতে হবে।
এছাড়া সচেতনতার বিকল্প নেই। অনেকই সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার ল সম্পর্কে জানেন না। এখানে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাইবার অপরাধের শিকার হলে কী করবেন
পুলিশ প্রশাসনের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগ রয়েছে। আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিষয়টি জানিয়ে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেও (বিটিআরসি) লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়ে রাখতে পারেন। এতে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করলে আপনি কিছুটা সুরক্ষা পেতে পারেন। তথ্যসূত্র ঢাকা পোস্ট