মোঃ ইয়া কাহারুল ইসলাম (নয়ন)
৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সেন্টমার্টিনের দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার প্রস্থ দ ২ কিলোমিটার। পূর্বের নাম ছিল নারিকেল জিঞ্জিরা। ৭ম-৮ম শতাব্দীতে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরব বণিকরা আকিয়াব ও রেঙ্গুন যাতায়াতের সময় এ দ্বীপে সাময়িক বিশ্রাম নিতেন।
এ দ্বীপে কাক ডাকা ভোরে নবজাতক শিশুর মতো। সকাল ১০ টায় মনে হবে ১০/১২ বছরের দুরন্ত কিশোর কিশোরী ১১ টা হতে বিকাল চারটে হবে ৮০ বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধা। ৪ টাকা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মনে হবে ১৮ বছরের যুবতী এইমাত্র পার্লার থেকে আনা হয়েছে। যারা দিনে গিয়ে ওই দিনই ফেরত আসে ভরদুপুরে তিন ঘন্টা ঘোরার সময় পাই তখন ৮০ বছর বয়সীর কঙ্কালসার নারীর মতো। তা দেখে ভ্রমণকারী মন খারাপ করে ফের জাহাজের ফিরে আসে। ফেরার পথে আপনাদের ডানে-বামে শাহপরীর দ্বীপ আর শত শত গান চিলের পিছে পিছে ছুটে চলার নয় বিশ্ব নদী পাহাড়ের আড়ালে সূর্য আর কিছু ছবি তোলা দিয়ে সেন্টমার্টিন সফর সফল সমাপ্তি টানেন। মন্তব্য করেন ফালতু কিছু দেখার নেই শুধু শুধু টাকা ও সময় নষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
একই ব্যক্তির ট্যুরটা যদি এমন হতো। ১ রাত / ২ রাত থাকার পরিকল্পনা নিয়ে সকাল ৯:৩০ টেকনাফ অথবা কক্সবাজার জাহাজে উঠার সময় ৪/৫ প্যাকেট চিপস নিয়ে উঠলেন জাহাজ ছাড়ার প্রথম পনেরো বিশ মিনিট ক্যামেরা অন করে নদী আর পাহারের সৌন্দর্যের কিছু ছবি তুললেন। একদম জাহাজের পিছনে চলে আসুন নিজেও খান গাঙচিল কে ও খাওয়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে শতাধিক গানচিল ডাকাডাকি শুরু করে দিলো আপনার থেকে ৫/৭ ফিট দূরে। ধরে আপনি ছুরছেন চিপস, পানিতে পড়ার আগে টপটপ গিলে নিচ্ছে সী বার্ড, আপনার চারপাশে ক্যামেরাগুলো ততক্ষণে অবিরাম ক্লিক ক্লিক শুরু করে দিয়েছে, আপনিও সেলফি তুলে নিজের অ্যালবাম কে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন।
এতক্ষণে জাহাজ নাফ নদী পেরিয়ে সাগরে এসে পড়েছে নতুন হলে আপনার মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে। জাহাজের ক্যান্টিন হতে এক কাপ কফি খেয়ে নিন ভালো লাগবে। নিজের আসনে বসে বিশ্রাম নিন ক্যামেরার ক্লিক করা পিক গুলো এর ঝলক দেখে নিন। মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে। এ এলাকায় শীত কম দুপুরের রোদের তাপ বেশি। আনন্দে থাকে বলে টের পায়না। ভ্রমনকারীরা টের পায় বাড়ির পরিবেশে ফেরার পর।তাই ছাতা অথবা সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করবেন দ্বীপে। জাহাজ হতে নেমে জাহাজ ঘাটে দোকানে বসে একটি ডাব খান। তারপর সেখানে অনেক মালপত্র না থাকলে হেঁটেই চলে যান আপনার বুকিং দেয়া কটেজে। কটেজ অবস্যই সমুদ্র পারে হতে হবে। তা না হলে সেন্টমার্টিন যাওয়াই বৃথা। কটেজে খাবার ও বিশ্রাম সেরে ৩.৩০ এ চলে যান ছেড়াদিয়া দ্বীপে। বড় বোডে উঠবেন নিরাপদে থাকবেন। সূর্যাস্তটা দেখে ফিরে আসবেন। আপনি কি জানেন পৃথিবীর সব দ্বীপ ভাটার সময় তার আসল রূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
বিয়ে বাড়িতে নতুন বউ দেখার সময় একজন ঘোমটা সরিয়ে যেমন বউ দেখাই সেন্টমাটিন দ্বীপ ও এমনি প্রতি ১২ ঘন্টায় একবার তার ঘুমটা ফেলে দেই। সেই সময় টার নাম ভাটা। তাই দুবেলা ভাটার সময় কটেজে না থেকে বেরিয়ে পড়ুন বিধাতার সৃষ্টি কৌশল কি নিখুঁত, অপরূপ সুন্দর, কি কঠিন নিয়ন্ত্রণ, কি অসীম তার ক্ষমতা দেখুন , ভাবুন। আপনার ভ্রমণের সময় টা যদি পূর্ণিমার রাত পরে তো সোনায় সোহাগা আপনি ভাগ্যবান ১০০ ভাগ সফল আপনার ট্যাুর। রাত টা কাটিয়ে দিতে পারেন বীচ পাড়ে পারে।
প্রতি ৩০ দিনের মধ্যে বড় জোয়ার ভাটা হয় পূর্ণিমার রাতে। দিনের মতো আলো, বিশাল ঢেউ যখন কূলে আঁছড়ে পড়ে ঢেউয়ের ফেলাই রেডিয়াম জ্বলে ওঠে। এ রাতে ভাটার সময় পানি অনেক দূরে চলে যায় (প্রায় ১ কিলোমিটার)। এই দ্বীপকে সাগরকন্যা বলে অনেকেই। সাগর কন্যার আরো দুই ছোট বোন আছে তারা ছেড়াদিয়া ও দারুচিনি দ্বীপ নামে পরিচিত। পূর্ণিমার সময় দুই বোনের বাড়িতে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। এই দ্বীপে প্রচুর পরিমানে সামুদ্রিক মাছ এবং শুটকি পাওয়া যায়।