আতিকুর রহমান:
এক সময় দিনমজুরি করে জীবিকা চালাতেন সেলিম মন্ডল। পরে দিনমজুরি ছেড়ে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন ফুলের নার্সারি। আর এতেই সফল হয়েছেন নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের লখাইজানি গ্রামের ফুলচাষি সেলিম মন্ডল।
গত ২৫ বছর থেকে তিনি বিভিন্ন ফুলের চাষ করলেও বর্তমানে গোলাপের চাষ করছেন। প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারাও বিক্রি করেন।
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন বলে জানান সেলিম মন্ডল।
জানা গেছে, এক সময় কৃষি কাজ ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা চালাতেন সেলিম মন্ডল (৬০)। কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় হাঁপানিয়া এলাকার আবুল হোসেন নামে নার্সারি মালিকের সঙ্গে। ২৫ বছর আগে তার পরামর্শে নার্সারি করেন সেলিম মন্ডল। তবে নার্সারি করার আগে নার্সারি যত্ন ও পরিচর্যা এবং কলম করা বিষয়ে ধারণা দেন আবুল হোসেন। এরপর একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেন।
লখাইজানি গ্রামে বাড়ির পাশে সেসময় ১০ হাজার টাকায় চার বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ফুলচাষ শুরু করেন। আর বাকি টাকা ফুলের চারা, শ্রমিক খরচ ও আনুসাঙ্গিক কাজে খরচ করেন। নাতির নামে নার্সারির নাম রাখেন ‘নাইম নার্সারি’।
ফুলচাষের চার মাসের মাথায় প্রথম ৪০০ টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ২-৩ দিন পর পর ৪০০-৫০০ টাকা করে ফুল বিক্রি হতে থাকে। সেসময় ফুলের দামও কম ছিল। ফুলের পাশাপাশি বনজ ও ফলজ গাছের চারাও বিক্রি করেন তিনি। বিভিন্ন হাটে হাটে চারা বিক্রি করেন।
পরিশ্রমের তুলনায় লাভ ভালো আসতে থাকে বলে জানান সেলিম মন্ডল। বর্তমানে তার নার্সারিতে সারা বছরই চারজন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
নার্সারি মালিক সেলিম মন্ডল বলেন, বাগানে চায়না ইরানি, তাজমহল, পাপা, গার্ডা ও মিনিপাল জাতের গোলাপ ফুল রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ভালোবাসা দিবস আসলে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া বাগানে যে পরিমাণ ফুল আছে আরো প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। ভালোবাসা দিবস ছাড়াও বসন্ত বরণ, একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সারা বছরই ফুলের কদর রয়েছে।
তিনি জানান, ফুল বিক্রিতে কোনো সমস্যা হয় না। দোকানিরা আগেই মোবাইল ফোনে চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার করেন। সে অনুযায়ী ফুল তুলে রাখা হয়। তারা বাগানে এসে ফুল নিয়ে যান। তার বাগান থেকে নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রাজশাহীতে ফুল সরবরাহ করা হয়।
সেলিম মন্ডল বলেন, বর্তমানে জমির ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ৫৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফুলের বাগান করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তাদের সংসার সাজিয়ে দিয়েছি। নিজের জন্য চার কাঠা জমি কিনে সেখানে পাকা বাড়িও করেছি।